নিজস্ব প্রতিবেদক:
পুলিশ-আওয়ামী লীগ মিলে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে দাবী কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে নাগরিক কমিটি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী (নারিকেল গাছ প্রতীক) বর্তমান মেয়র সরওয়ার কামাল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নীল নকশার নির্বাচনের পথে হাঁটছে। কক্সবাজার পৌরসভাতেও ‘খুলনা-গাজিপুর মার্কা নির্বাচন’ করতে চাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা এই আভাস দিয়েছে। নিজেরাই নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে। নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেনা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) বিকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলেন মেয়রপ্রার্থী সরওয়ার কামাল।
তিনি বলেন, কক্সবাজার শান্তিপূর্ণ নগরী। এখানে রয়েছে রাজনৈতিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। সামান্য একটি পৌর নির্বাচনকে নিয়ে পর্যটন নগরীকে অশান্ত করতে চেষ্টা করছে একটি মহল। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাসী ও হয়রানী করছে পুলিশ। পথে-ঘাটে হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন। সরকারী দলের ইন্দনে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ঘোলাটে করার অপচেষ্টাা থেমে নেই। কোন ঘটনা ছাড়াই বিএনপি ও জামায়াতের ৫৭ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশের দায়ের করা মামলা তারই প্রমাণ।
তিনি বলেন, আমরা চাই জনগণের ভোটের নিশ্চয়তা। ভোটাধিকার হরণ করা হলে কঠোরভাবে জবাব দেয়া হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলা হবে। সন্ত্রাসী, কেন্দ্র দখলবাজদের প্রতিরোধ করা হবে।
নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে এনে জনগণকে ভোটের প্রতি আশ্বস্থ করার আহবান জানিয়ে সরওয়ার কামাল বলেন, আমরা বারবার বলেছি কক্সবাজার পৌরসভায় সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। তা নির্বাচন কমিশনকেও লিখিত জানিয়েছি। সরকারী দলের প্রার্থী নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে।
পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েন দাবী করে নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী সরওয়ার কামাল বলেন, পুলিশ ইতোমধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করছে। তাদের উপর কোন আস্থা নেই। জনগণের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তার জন্য সেনা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
বিএনপি ও জামায়াতের ৫৭ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশের দায়ের করা মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রতিহিংসামূলক মন্তব্য করে সরওয়ার কামাল বলেন, এজাহারে যে ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, ওই রকম কোনো ঘটনা এখনো পর্যন্ত কক্সবাজারে ঘটেনি। স্থানীয়রা কেউ ঘটনার সম্পর্কে অবগত নয়।
মামলার এজাহার মতে, ১৭ জুলাই ভোর ৫টা ৫৫মিনিটে নাশকতা করতে যানবাহনে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও আগুন দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই সময়ে শহরের মানুষ ঘুমে থাকে। তখন গাড়িও চলে না। সেখানে নাশকতার চেষ্টা কিভাবে হয়? তা এখন বড় প্রশ্ন।
মূলতঃ ভোট ডাকাতির পথ সহজ করতে একটি মহলের ইন্ধনে প্ররোচিত হয়ে পুলিশ এই মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেছে। মিথ্যা মামলার জবাব ব্যালেটের মাধ্যমে দেবে ভোটাররা।
পুলিশ ও আওয়ামী লীগের এই নগ্নতার বিষয়টি তুলে ধরতে সংবাদকর্মীদের প্রতি আহবান জানান নাগরিক কমিটির প্রার্থী সরওয়ার কামাল। সেই সাথে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পাশাপাশি গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া।
তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন ধার্য করার পর থেকে কক্সবাজার সুন্দর পরিবেশ ছিল। হঠাৎ এমন পরিস্থিতি আমরা আশা করিনি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তুলনায় আমাদের অবস্থা শক্তিশালী হওয়ায় তারা ভিন্ন মতলবে আছে। আমাদের আর্জিত ফসল তাদের ঘরে তুলতে চাচ্ছে।
গোলাম কিবরিয়া বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের কারণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থার প্রতিনিধিরা অবস্থান করে। বিদেশী গণমাধ্যমকর্মীরাও থাকে। পৌর নির্বাচনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সারাবিশ্বে কক্সবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সাহায্য সংস্থা নিজেদের গুটিয়ে নিলে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কার্যক্রমে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারও বেকায়দায় পড়বে। সামান্য একটি পৌরসভার নির্বাচনের জন্য বড় ধরণের কোন ক্ষতি হোক-তা আমরা কামনা করিনা।
তিনি প্রশ্ন করেন, কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে হারজিত নিয়ে তো সরকার পরিবর্তন হবেনা। এত কা- করা কি দরকার?
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী জিএম রহিমুল্লাহ বলেন, শহরের সমিতিপাড়ায় সাদেক হোসেন ও রহমত উল্লাহ নামের আমাদের দুইজন কর্মীর উপর দুই দফা হামলা করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা দিদারুল আলম। একইভাবে অন্যান্য এলাকায়ও হুমকি ধমকি ও হামলার ঘটনা শুরু হয়েছে। এসব ঘটনা খুবই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, ‘শয়তানি বুদ্ধিওয়ালা’ একটি টিম কক্সবাজারে অবস্থান করছে। বসে বসে তারা নীল নকশার নির্বাচনের ছক আঁকছে। কক্সবাজারের জনগণ খুবই শান্ত। জাগলে কিন্তু দমিয়ে রাখা যায়না। পাঁতানো নির্বাচন কক্সবাজারে হতে দেয়া হবেনা।
জিএম রহিমুল্লাহ প্রশ্ন রাখেন, ভোটের পরিবেশ নষ্ট করে কক্সবাজারকে বদনামীতে ফেলে লাভ কি? সুষ্টু ভোটে যেই নির্বাচিত হবে- তাকে মেনে নেব। ভোট ডাকাতি, হয়রানী করা হলে জোটগতভাবে প্রতিহত করা হবে। পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনকে দায়ী থাকতে হবে। সময় থাকতে হুঁশিয়ার না হলে প্রশাসনকে খেসারত দিতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়র পদে আমরা পৃথক প্রার্থী দিলেও বোঝাপড়া ঠিকই আছে। প্রয়োজনে আমরা এক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলব।